হালাল উপার্জন :
আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আতনা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে না।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর, সে সমন্ধে আমি অবহিত”। (সূরা মুমিনুন:৫১)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে সব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে আহার কর”। (সূরা বাকারাঃ ১৭২)
এরপর নবী ﷺ এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে, দীর্ঘ সফর করে যার এলোমেলো চুল ধুলায় ধুসরিত সে আকাশের দিকে দু-হাত তুলে বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম,পানীয় হারাম,পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং তাঁর শরীর গঠিত হয়েছে হারামে। অতএব,তাঁর দু’আ কিভাবে কবুল করা হবে? [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) :: অধ্যায়ঃ ১৩/ যাকাত :: হাদিস নাম্বারঃ ২২১৬]
হালাল উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা :
বুখারী শরীফের ৬৯২৪ নং হাদিস এ উল্লেখ আছে –
ওয়ারকা আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর দিকে পবিত্র জিনিস ছাড়া কোন কিছুই গমন করতে পারে না।
একই হাদিসে আরো উল্লেখ আছে –
খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাত দ্বারা কবুল করেন। আর পবিত্র ও হালাল জিনিস ছাড়া আল্লাহর দিকে কোন কিছু আগমন করতে পারে না।
মিশকাত শরীফ (হা: নং ২৬৩৩), মুসনাদে আহমাদ এ উল্লেখ আছে :
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে কোনো বান্দা হারাম উপার্জিত অর্থ দান-খয়রাত করলো তা কবুল হবে না এবং তা নিজ কার্যে ব্যয় করলে বরকত লাভ হবে না । আর ঐ ধন তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তার জন্য দোযখের পুঁজি হবে ।
মিশকাত শরীফ (হা: নং ২৬৩৪), মুসনাদে আহমাদ এ উল্লেখ আছে :
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে দেহের গোস্ত হারাম মালে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না । হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য দোযখই সমীচীন ।
মিশকাত ২৬৫০। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসুল ﷺ বলেছেন, অন্যান্য ফরযের ন্যায় হালাল কামাইয়ের ব্যবস্থা গ্রহণও একটি ফরয । (বায়হাকী শোআবুল ঈমান)
হারাম থেকে বেচে থাকা :
হযরত মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, আলী ইবনু আবদুল্লাহ,আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু কাছীর (রহঃ) হযরত নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,রাসূল ﷺ বলেছেন,হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট,উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যাক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে,সে ব্যাক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট,সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দু:সাহস করে,সে ব্যাক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। গুনাহসমূহ মহান আল্লাহ্ তা’আলার সংরক্ষিত এলাকা,যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে,তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। [সহীহ বুখারি (ইফা) : হাদিস নং ১৯২৩]
ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর একজন ক্রীতদাস ছিল। সে প্রত্যহ তার উপর নির্ধারিত কর আদায় করত। আর আাবূ বকর (রাঃ) তার দেওয়া কর থেকে আহার করতেন। একদিন সে কিছু খাবার জিনিস এনে দিল। তা থেকে তিন আহার করলেন। তারপর গোলাম বলল, আপনি জানেন কি উহা কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে যা আপনি খেয়েছেন? তিনি বললেন, বলত ইহা কি? গোলাম উত্তারে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যাক্তির ভবিষ্যৎ গণনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যৎ গণনা করা আমার উত্তমরূপে জানা ছিল না। তথাপি প্রতারণামূলকভাবে ইহা করেছিলাম। (কিন্তু ভাগ্যচক্রে আমার গণনা সঠিক হল।) আমার সাথে তার সাক্ষাৎ হলে গণনার বিনিময়ে এ দ্রব্যাদি সে আমাকে হাদীয়া দিল যা থেকে আপনি আহার করলেন। আবূ বকর (রাঃ) ইহা শোনামাত্র মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বমি করে দিলেন এবং পাকস্থলীর মধ্যে যা কিছু ছিল সবই বের করে দিলেন। [সহীহ বুখারি (ইফা) : হাদিস নং ৩৫৬৪]
.
মিশকাত ২৬৫২। হযরত ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি দশ মুদ্রায় একটি কাপড় ক্রয় করেছে, যার মধ্যে একটি মুদ্রা হারাম ছিল, যতক্ষণ ঐ কাপড়টি তার পড়নে থাকবে,ততক্ষণ তার সালাত কবুল হবে না। ইবনে ওমর (রা) এই বিবরণ দানের পর তার দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে বললেন,আমার কান দুটি বধির হয়ে যাবে যদি এই বর্ণনা আমি রাসুল ﷺ কে বলতে না শুনে থাকি। [আহমদ,বায়হাকী শোআবুল ঈমান]
কতিপয় হারাম উপার্জন:
হযরত আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) হযরত আওন ইবনু আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্নিত,আমার পিতাকে দেখেছি, তিনি এক গোলাম খরিদ করেন,যে শিঙ্গা লাগানোর কাজ করত। তিনি তার শিঙ্গার যন্ত্রপাতি সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসূল ﷺ কুকুরের মূল্য এবং রক্তের মূল্য গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন, আর দেহে দাগ দেওয়া ও লওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। সুদ খাওয়া ও খাওয়ানো নিষেধ করেছেন আর ছবি অংকনকারীর উপর লা’নত করেছেন। [সহীহ বুখারি (ইফা) : হাদিস নং ১৯৫৬]
হযরত হাসান ইবনে আলী (রা) বলেন,রাসূল ﷺ এর এই বাণীটি আমি ভালোভাবে স্মরণ রেখেছি যে, যে কাজে মনে খটকা লাগে, সেই কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন কর । সত্য ও শুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্বিধা সৃষ্টি হয়না, মিথ্যা ও অশুদ্ধের ক্ষেত্রেই দ্বিধার সৃষ্ঠি হয় । [আহমদ,তিরমিজী,নাসাই,মিশকাত (২৬৪৫)]
হযরত ওয়াবেসা ইবনে মা’বদ (রা) থেকে বর্ণিত,একদা রাসূল ﷺ তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন,হে ওয়াবেসা ! তুমি এসেছ ভালো ও মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য । আমি আরয করলাম হ্যা,তাই । (রাবী বলেন) তখন রাসুল ﷺ নিজের হাতকে মুষ্ঠিবদ্ধ করে তাঁর বুকে মারলেন এবং বললেন,তোমার মনকে জিজ্ঞেস কর,তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস কর। এই কথা তিনবার বলার পর বললেন,ভালো ও নেক কাজে মন স্থির থাকবে,অন্তর শান্ত ও দ্বিধামুক্ত থাকবে । মন্দ ও গুনাহের কাজে মনে খটকা লাগবে,অন্তরে-দ্বিধা সংশয় সৃষ্টি হবে। যদিও জনগণ তার পক্ষে মত প্রকাশ করে । [আহমদ,দারেমী,মিশকাত (২৬৪৬)]
.
উক্ত হাদিসের আলোকে আমার আপনার সবার দায়িত্ব নিজেদের আয়ের উৎসগুলো খতিয়ে দেখা । যদি হারাম আয় থাকে তবে অতিসত্তর আল্লাহর কাছে তওবা করে হারাম আয়ের উৎস বন্ধ করা দরকার । বাস্তবে মেনে নিতে হবে যে আল্লাহই একমাত্র রিযিকদাতা । আল্লাহ আমাদের সকলকে হারাম থেকে বেচে হালাল রিজিকের বেবস্থ্যা করে দিন, আমাদের অন্তরকে সত্যের অনুসারী করে দিন । আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরীয়তের সহিহ বুঝ দান করুক এবং নিজেদের উপার্জনকে হারাম থেকে বিরত রাখুন । সামান্য ৫০-৬০ বছরের ক্ষনস্থয়ী দুনিয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ নয় বরং সীমাহীন পরকাল যেন বরবাদ না হয়ে যায় সেইদিকে আমরা সবাই খেয়াল রাখি।





