সালামের গুরুত্ব ঃ
কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইসলামের কোন্ কাজ সবচাইতে উত্তম?’ তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের আহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে সালাম করবে। -বুখারী ২৭ (ইফাঃ)
হযরত আবু দারদা (রাযীঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা সালামের খুব প্রচলন ঘটাও। তাহা হইলে তোমরা উন্নত হইয়া যাইবে। -তাবারানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ
মদিনায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম যে নসিহত করেছিলেন তার ভিতর সালাম ও ছিলো একটি।
আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদীনায় এলেন তখন লোকেরা দ্রুত তাঁর দিকে ছুটে গেল। বলাবলি হতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এসেছেন। লোকদের মধ্যে আমিও তাঁকে দেখতে গেলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর চেহারা যখন আমার সামনে প্রতিভাত হল আমি চিনে ফেললাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তিনি প্রথম যে কথা উচ্চারণরণ করলেন তা হলঃ হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রসার ঘটাবে, লোকদের খাদ্য দিবে, মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে (শেষ রাতে) তখন (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করবে। তাহেল তোমরা শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে দাখেল হতে পারবে। -তিরমিযি (ইফাঃ) ২৪৮৭, ইবনু মাজাহ (ইফাঃ) ১৩৩৪,৩২৫১
সালাম মুসলমানদের জন্য এতই গুরুত্বপূর্ণ যার কারনে আল্লাহর রাসুল ﷺ সালাম দেয়াকে মুসলমানদের হক হিসাবে ও ঘোষণা দিয়েছেনঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের ছয়টি হক আছে। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সেগুলি কি? তিনি বলেনঃ ১। কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম দেবে, ২। তোমাকে কেউ দাওয়াত করলে তা কবুল করবে, ৩। কেউ তোমার কাছে পরামর্শ চাইলে, তাকে সৎ পরামর্শ দিবে, ৪। কেউ যখন হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তুমি তার জবাব দেবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে), ৫। কেউ অসুস্হ হয়ে পড়লে তার সেবা যত্ন করবে এবং ৬। কেউ মারা গেলে তার জানাযায় ও দাফনে শরীক হবে। -মুসলিম ৫৪৮৮ (ইফাঃ)
সালাম বিষয়ক কিয়ামতের আলামত ঃ
হযরত ইবনে মাসউদ (রাযীঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করিয়াছেন, কিয়ামতের আলামতসমুহ হইতে একটি আলামত এই যে, এক ব্যাক্তি অপর ব্যক্তিকে শুধু পরিচয়ের ভিত্তিতে সালাম করিবে (মুসলমান হওয়ার ভিত্তিতে নয়)। -মুসনাদে আহমাদ
ঘরে ঢুকা ও বের হওয়ার সময় সালাম দেয়াঃ
হযরত কাতাদা (রহঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম ﷺ এরশাদ করিয়াছেন, যখন তুমি কোন ঘরে প্রবেশ কর তখন ঐ ঘরওয়ালাদেরকে সালাম কর। আর যখন (ঘর হইতে) বাহির হও তখন ঘরওয়ালাদেরকে সালাম করিয়া বিদায় হও। -মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক
আগে সালাম দেয়াঃ
হযরত আব্দুল্লাহ (রাযীঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম ﷺ এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম করে সে অহংকার হইতে মুক্ত। – বায়হাকী
সালাম কে কাকে দিবেঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে যাওয়া ব্যক্তিকে সালাম দেবে, পদব্রজে চলে যাওয়া ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে এবং ছোট দল (সংখ্যায়) বড় দলকে সালাম দেবে। -মুসলিম ৫৪৬১ (ইফাঃ)
সালাম দেয়ার পদ্ধতি (ত্রিশ নেকী পাওয়ার উপায়) ঃ
ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর কাছে এসে বলেঃ السلام عليكم (আসসালামু আলাইকুম।) নবী (ﷺ) তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ সে দশটি নেকী পেয়েছে । এরপর একব্যক্তি এসে বলেঃ السلام عليكم ورحمة الله (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ)। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ সে বিশটি নেকী পেয়েছে । এরপর একব্যক্তি এসে বলেঃ السلام عليكم ورحمة الله وبركاته (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)। নবী (ﷺ) তার সালামের জবাব দিলে সে বসে পড়ে। তখন তিনি বলেনঃ সে ত্রিশটি নেকী পেয়েছে। -আবু দাউদ ৫১০৫ (ইফাঃ)
আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী। – 4:86
আহলে কিতাবদের (ইহুদী এবং খ্রিস্টান) আগে সালাম না দেয়া এবং তাদের সালামের উত্তর কিভাবে দেয়া উচিৎঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের প্রথমে সালাম দিও না। পথে যদি তাদের কারো সাথে তোমাদের দেখা হয়, তাহলে তাকে গলি পথে যেতে বাধ্য কর।-মুসলিম ৫৪৯৮ (ইফাঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা সাহাবীগণ নবী করীম ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেনঃ আহলে- কিতাবগণ (ইয়াহূদী- নাসারারা) আমাদের সালাম করে, আমরা তাদের সালামের জবাব কিভাবে দেব ? নবী ﷺ বলেনঃ তোমরা শুধু وعليكم (ওয়া- আলায়কুম) বলবে। -আবু দাউদ ৫১১৭(ইফাঃ)
সালামের সাথে মুসাফাহার ফযিলত ঃ
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলমান মিলিত হওয়ার পর মুসাফা করে, তখন তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। -আবু দাউদ ৫১২২(ইফাঃ)






Jazak Allah