হাদিস ০১। পাপের কাজ ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে শাসকের আনুগত্য ওয়াজিব। পাপের কাজে আনুগত্য হারাম
জুনাদা ইবনে আবু উমাইয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উবাদা ইবনে সামিতের কাছে গেলাম। তিনি তখন রােগগ্রস্ত ছিলেন। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনার স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিন। আমাদের একটি হাদীস বর্ণনা করুন যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুনেছেন এবং আল্লাহ তাআলা (আমাদের জন্য) তা উপকারী প্রমাণ করুন। তিনি বললেন ঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডাকলেন এবং আমরা তাঁর নিকট আনুগত্যের বাইআত করলাম। তিনি যেসব বিষয়ে আমাদের থেকে বাইআত নিয়েছেন তা হচ্ছে ঃ সুখে-দুঃখে, দুর্দিনে-সুদিনে, দুর্ভিক্ষে প্রাচুর্যে, এমনকি কোন ব্যক্তিকে আমাদের ওপর প্রাধান্য দেয়া হলেও আমরা নেতার আনুগত্য করে যাব এবং (নেতার দৃষ্টিতে) যােগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব অর্পণ করা হলে আমরা তাতে বাধা দেব না। তিনি আরাে বলেছেন ঃ (যে কোন অবস্থায় তার আনুগত্য করতে হবে) কিন্তু তােমরা যদি তাকে প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত দেখ, যে সম্পর্কে তােমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ বর্তমান রয়েছে (তখন কোন আনুগত্য নেই)। – সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) ৪৬২০
টীকা: যদি ইমাম বা শাসক প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত হয়, যা প্রত্যেক লােকের কাছে কুফরী বলে স্বীকৃত, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অনস্থার দাবী তােলা ওয়াজিব।
হাদিস ০২। আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া যাবে না কতক্ষন পর্যন্ত
আওফ ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ “তােমাদের উত্তম ইমাম (শাসক) হচ্ছে, যাদের তােমরা ভালােবাসাে আর তারাও তােমাদের ভালােবাসে। তারাও তােমাদের জন্যে দোয়া করে এবং তােমরাও তাদের জন্যে দোয়া কর। আর তােমাদের নিকৃষ্ট ইমাম (শাসক) হচ্ছে, যাদের তােমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তােমাদের ঘৃণা করে এবং তােমরা তাদের অভিশাপ দাও, আর তারাও তােমাদের অভিশাপ দেয়।” বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তরবারির সাহায্যে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করব না? তিনি বললেনঃ “না, যতদিন তারা তােমাদের মধ্যে (সরকারী উদ্যোগে) নামায কায়েম করে। যখনই তােমরা তােমাদের শাসকদের কোনাে মন্দ কাজে লিপ্ত দেখ, তাদের প্রশাসনকে ঘৃণা কর, কিন্তু আনুগত্য প্রত্যাহার কর না।” – সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) ৪৬৫৩
হাদিস ০৩। শাসক হিসেবে হাবশী গোলামের অনুসরণ ও ওয়াজিব
সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) … ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন এর দাদী উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী (ইয়াহইয়া ইবনুু হুসাইন) বলেন যে, আমি তাকে বলতে শুনেছি- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিদায় হজ্জ পালন করি। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন অনেক কথাই বলেছিলেন। উম্মুল হোসাইন আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর ভাষণে) অনেক কথাই বলেছেন, অতঃপর আমি তাকে এ কোথাও বলতে শুনেছি, যদি কোন নাক কান কাঁটা কৃষ্ণকায় গোলামও (অন্য সূত্রে বর্ণিত কৃষ্ণকায় হাবশী গোলাম) তোমাদের উপর শাসক নিযুক্ত হয় এবং সে তোমাদের আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করে, তবে তোমরা তার নিৰ্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। – সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) ৪৬১২
হাদিস ০৪। নামাজ পড়া শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না (যদি সে ইসলামী বিধানের পরিবর্তন না করে)
উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই এমন ধরনের শাসকের আবির্ভাব হবে যাদের ভাল কাজ তােমরা পছন্দ করবে এবং খারাপ কাজ অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের খারাপ কাজ দেখবে (এবং শক্তি প্রয়ােগে অথবা মুখের কথায় তার প্রতিরােধ করবে) সে দায়িত্বমুক্ত বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি তাদের এই কুকর্ম (আন্তরিকভাবে) ঘৃণা করবে, সেও (আল্লাহর গযব থেকে) নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি শাসকদের এই গর্হিত কাজ সমর্থন করবে এবং তার অনুসরণ করবে সে ধ্বংস হবে। লােকেরা বলল, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবাে না? তিনি বললেন ঃ না, যতদিন তারা নামায পড়ে। – সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) ৪৬৪৯
টীকাঃ অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুখে অথবা শক্তিবলে অন্যায়কে রােধ করতে সক্ষম নয়, তার উচিত অন্তর থেকে তা ঘৃণা করা বা অসমর্থন জ্ঞাপন করা। আর যদি শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয় তাহলে তাই করতে হবে। অন্যথায় পাপে পতিত হবে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, যালেম বা ফাসেক শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না, যদি সে ইসলামী বিধানের পরিবর্তন না করে। (অ)।






