মিরাস বন্টন

By | Mon 23 Muharram 1438AH || 24-Oct-2016AD

প্রশ্ন ১৬৮৮: কামাল সাহেব তিন পুত্র রেখে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তার মালিকানায় শুধুমাত্র ১টি সাবানের ফ্যাক্টরি ছিল। তার তিন ছেলে দীর্ঘ দিন যাবৎ ফ্যাক্টরির যা আয় হত তা সমানভাগে বন্টন করে নিত। বর্তমানে এক ছেলে পারিবারিক কলহে লিপ্ত হয়ে ফ্যাক্টরিটি বন্টন করতে চাচ্ছে। কিন্তু যদি তা বন্টন করা হয় তাহলে তা থেকে কোনো আয়ের সম্ভাবনা নেই। তাই অন্য ভাইরা বন্টনে সম্মত নয়। এ অবস্থায় এক ভাইয়ের দাবি অনুযায়ী ফ্যাক্টরিটি বন্টন করা জরুরি কি না? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর: প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু কারখানাটি উৎপাদন উপযোগী রেখে বন্টন করা সম্ভব নয় তাই এ পরিস্থিতিতে সকল মালিকের সম্মতি ছাড়া তা বন্টন করা যাবে না। শুধু একজনের দাবি মেনে তা বন্টন করা জরুরি নয়। কেউ অংশিদার না থাকতে চাইলে কারখানার ন্যায্য মূল্য হিসাব করে অন্য অংশিদারগণ তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিবে। কিংবা শরীকদের সম্মতিতে অন্য কারো কাছে তার শেয়ার বিক্রিও করে দিতে পারে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৪৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৫৪


প্রশ্ন ৩৪২১: কাসেম, শফিক ও দীন মুহাম্মাদ। তারা তিন ভাই একসাথে নৌকা নিয়ে মাছ ধরত। দু’এক মাস আগে সাগরের আবহাওয়া খারাপ হলে তারা তিন ভাই নৌকা ডুবে মারা যায়। তাদের মধ্যে কাসেমের এক স্ত্রী, দুই ছেলে, শফিকের এক স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আর দীন মুহাম্মাদ বিয়ে করেনি। তাদের মা-বাবা, এক ভাই, দুই বোন জীবিত আছে।

এখন ওয়ারিশগণ জানতে চায় যে, মৃত তিন ভাইয়ের মীরাস তাদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে? উল্লেখ্য, তিন ভাইয়ের মৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে কার আগে কে মারা গেছে তা জানা যায়নি।

উত্তর: প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মৃত তিন ভাইয়ের রেখে যাওয়া নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে প্রথমে তাদের কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) সম্পন্ন করতে হবে। অতপর তাদের কোনো ঋণ থাকলে তা (নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে) পরিশোধ করতে হবে। এরপর তাদের কারো কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা ঐ ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় করতে হবে। অতপর প্রত্যেকের অবশিষ্ট সম্পত্তি নিজ নিজ ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নে বর্ণিত তফসীল অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।

কাসেমের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের নিয়মে পাবে।

বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫% আর প্রত্যেক ছেলে ২৭.০৮৩% করে পাবে।

আর শফিকের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের শতকরা হারে পাবে।

বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫%, ছেলে : ৩৬.১১১% ও মেয়ে : ১৮.০৫৫%।

দীন মুহাম্মাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নোক্ত হারে পাবে-

বাবা : ৮৩.৩৩৩%, মা : ১৬.৬৬৬%।

উল্লেখ্য, মৃত তিন ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে তাদের ভাই-বোনেরা বাবা জীবিত থাকার কারণে কোনো হিস্যা পাবে না।

আরো উল্লেখ্য যে, এভাবে একাধিক লোক একত্রে মৃত্যুবরণ করলে যদি তাদের মধ্যে কে আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে তা জানা না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারা নিকটাত্মীয় হলেও একে অন্যের থেকে কোনো মীরাস পায় না।     -সূরা নিসা (৪) : ১১; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৩২; সুনানে বায়হাকী ৬/২২২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৯, ৪৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৮, ৬/৪৫০, ৬/৪৫১, ৬/৪৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৯৮


প্রশ্ন ৩৪৪২: আমার স্বামী পৈত্রিক সূত্রে টিনশেড বাড়িসহ ৪.৬৭ শতক জমির মালিক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে ইন্তেকাল করেন। উক্ত সম্পত্তি ছাড়া তার আর কোনো সম্পত্তি ছিল না। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি উক্ত ৪.৬৭ শতক জমি (টিনশেড বাড়িসহ) ছোট মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে দান করে দেন এবং দখলও বুঝিয়ে দেন। ইন্তেকালের সময় তার ওয়ারিশদের মধ্যে আমি তার স্ত্রী, ৪ কন্যা, ২ ভাই ও ৩ বোন জীবিত ছিল।

আমার বর্তমানে নিম্নোক্ত সম্পত্তি আছে-

১ বিঘা জমি, ৪.১২ শতক জমির উপর ৪ তলা ভবন ও কিছু নগদ টাকা।

আমার উক্ত সম্পত্তির মধ্যে ৪ তলা বাড়ির ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা বড় তিন কন্যাকে দান করা হয়েছে। কেননা তারা পিতা থেকে কিছুই পায়নি। আর প্রথম তলা ভাড়া বাবদ অর্জিত অর্থের অর্ধেক আমাদের অবর্তমানে আমাদের নামে সদকা করা হবে। আর বাকি অর্ধেক অর্থ ভবনের মেরামত কাজে ব্যবহার করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। আমার ওয়ারিশদের মধ্যে ৪ কন্যা, ১ ভাই এবং ২ বোন আছে।

এ অবস্থায় আমার জানার বিষয় হল,

ক) আমার স্বামী ছোট মেয়েকে যে দান করেছেন এবং আমি বড় তিন মেয়েকে যে দান করেছি তা সহীহ হয়েছে কি না?

খ) এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে কি না?

গ) অন্য ওয়ারিশদের এতে আপত্তি করার সুযোগ আছে কি না?

ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া সদকা করার বিষয়টি সঠিক হয়েছে কি না?

যদি উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত মোতাবেক না হয় তাহলে আমার এবং কন্যাদের করণীয় কী হবে? অনুগ্রহপূর্বক জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।

উত্তর: ক, খ ও গ) আপনার স্বামী তার জীবদ্দশায় ছোট মেয়েকে যে সম্পদ দান করেছেন এবং আপনি পরবর্তীতে বড় তিন কন্যাকে যে তিনটি ফ্ল্যাট দান করেছেন এবং তাদেরকে উক্ত সম্পদের মালিকানাও বুঝিয়ে দিয়েছেন এর দ্বারা তারা ঐ সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে। পিতার জন্য সকল সম্পদ ছোট মেয়েকে দিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখার জন্য বড় তিন মেয়েকে তিন ফ্ল্যাট দেওয়া আপনার জন্য ঠিক হয়েছে।   -উমদাতুল কারী ১৩/১৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৩৫৮

ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া আপনার অবর্তমানে গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক আছে এবং উদ্যোগটি প্রশংসনীয়ও বটে। তবে এটি কার্যকর করার জন্য আপনার জীবদ্দশাতে ঐ অংশ নির্ধারিত খাতে ওয়াকফ রেজিষ্ট্রি করে দিতে হবে। যেন আপনার অবর্তমানে তা  কার্যকর থাকে।    -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৬

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

2 thoughts on “মিরাস বন্টন

  1. আহমদ আলি

    আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন আমার প্রশ্ন হলো আমার মা মারা গেছে ওর নামে দুই বিঘা জমি আছে 4 জন অরিশ রেখে মারা গেছে আমরা দুই ভাই আর এক বোন আর আব্বু
    তার পর আমার আব্বু আবার বিয়ে করেন এই খানে আমার দুই বোন আর এক ভাই আছে
    কিছু দিন হলো আব্বা মারা গেছে
    এখন ঐ জমি কি আমার সৎ মা ভাই বোন পাবে আব্বুর উওরসরি হিসেবে একটু দয়া করে জানাবেন

    Reply
    1. Jalal Uddin Post author

      আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। বাকি আমাদের এই সাইটটি কোনো অনলাইন মাসালা দেয়ার সাইট নয় বলে সবচেয়ে উত্তম হবে মাসিক আল-কাউসার এর ফতোয়া বিভাগে যোগাযোগ করে জেনে নিলে। যার ফোন নাম্বার সহ অন্যান্য তথ্য নিচের লিংক এ গেলে পাওয়া যাবে।
      https://www.alkawsar.com/bn/about/contact-us/
      আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ও উপকারী ইলম সঠিক ভাবে জানার ও মানার ব্যবস্থা করে দেন।

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*