আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৪৩. মুহাম্মাদ ইবন আলা (রহঃ) – – – আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ মন্ত্র, তাবিজ ও তাওলা১ করা শিরক। একথা শুনে যয়নব (রাঃ) বলেনঃ তুমি এ কি বলছ, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হলে আমি একজন ইয়াহূদীর কাছে যেতাম, যে মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফু দিলে ব্যথার উপশম হতো। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল, যে তার হাত দিয়ে চোখে ব্যথা দিত। আর যখন ঐ ইয়াহূদী তাতে ফু দিত, তখন সে বিরত থাকতো। তোমার জন্য তা-ই পাঠ করা উচিত ছিল, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতেন। আর তা হলোঃ
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
হে মানব জাতির রব! যন্ত্রণা দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদাতা, আপনার দেয়া নিরাময়ই যথার্থ নিরাময়, যার পরে আর কোন রোগ বাকী থাকে না।
১। তাওলা এক প্রকার যাদু, যা দিয়ে বেগানা স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে অবৈধ প্রেম সৃষ্টি করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি হারাম কাজ।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৪৬. আহমদ ইবন সালিহ (রহঃ) – – – আওফ ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা জাহিলী যুগে ঝাঁড়-ফুক করতাম। তখন আমরা বলি : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি একে কিরূপ মনে করেন। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা তা আমার সামনে পেশ কর কেননা তখন মন্ত্রের মধ্যে শিরকের কিছু থাকবে না তা করাতে কোন ক্ষতি নেই।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৪৭. ইবরাহীম ইবন মাহদী (রহঃ) – – – শিফা বিনত আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন : একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসেন, যখন আমি হাফসা (রা)- এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেনঃ তুমি তাকে কেন নামলা (এক প্রকার রোগ সারার মন্ত্র) শিখাও না, যেমন তুমি তাকে লেখা শিখিয়েছ?
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৫০. মুসাদ্দাদ (রহঃ) – – – আনাস ইবন মালিক (রাঃ) একদা ছাবিত (রাঃ) কে বলেনঃ আমি কি তোমার কাছে ঐ দু’আটি পাঠ করবো না, যা পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগীদের উপর দম করতেন? তিনি বলেনঃ আবশ্যই। তখন আনাস (রাঃ) নিম্নক্ত দু’আটি পাঠ করেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ اشْفِهِ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
হে আল্লাহ্, মানুষের রব! যন্ত্রণা দূরকারী! রোগমুক্তি দিন, রোগমুক্তির মালিক একমাত্র আপনিই। এমন রোগমুক্তি দিন যাতে কোন রোগই অবশিষ্ট না থাকে।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৫৩. মূসা ইবন ইসমাইল (রহঃ) – – – আমর ইবন শুআয়েব (রাঃ) তার পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিপদের সময় এ দু’আ পড়তে বলতেন :
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
আর আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) তার বয়স্ক ছেলে মেয়েদের এ দু’আ শিখিয়ে দিতেন এবং ছোট বাচ্চাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৫৬. মুসাদ্দাদ (রহঃ) – – – খারিজা ইবন সালত তামীমী (রাঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে ইসলাম কবুল করেন। তিনি সেখান থেকে ফেরার সময় এমন এক কাওমের নিকট উপস্থিত হন, যেখানে একটি পাগল শিকলে বাঁধা ছিল। তখন তার স্বজনরা তাকে বলেঃ আমরা শুনেছি তোমাদের এক সাথী (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনেক ভাল জিনিস নিয়ে এসেছেন; তোমার কাছে এর কিছু আছে কি, যা দিয়ে তুমি এর চিকিৎসা করতে পার? তখন আমি সূরা ফাতিহা পড়ে দম করায় সে ভাল হয়ে যায়। তখন তারা সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে একশত বকরী প্রদান করে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করি। তখন তিনি বলেন : তুমি কি এ সূরাই পড়েছিলে? রাবী মুসাদাদ্দ (রহঃ) অন্যখানে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি এ সূরা ব্যতীত অন্য কিছু পড়েছিলে? আমি বলিঃ না। তখন তিনি তাঁর জীবনের শপথ দিয়ে বলেনঃ তুমি ইহা গ্রহন কর, লোকেরা তো মিথ্যা মন্ত্র পাঠ করে রুজী রোজগার করে খায়, আর তুমি তো সত্য দু’আ পাঠ করে খাচ্ছ।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৫৯. মুসাদ্দাদ (রহঃ) – – – আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একদল সাহাবী সফরে গমনকালে আরবের এক সম্প্রদায়ের নিকট অবস্থান করেন। তখন সে সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বলেঃ আমাদের নেতাকে একটি বিষাক্ত জন্তুতে দংশন করেছে, তোমাদের মধ্যে কারো কাছে এমন কিছু আছে কি, যা আমাদের নেতার উপকারে আসে? তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলেনঃ হ্যাঁ আল্লাহর শপথ! আমি ঝাঁড়-ফুক করে থাকি। কিন্তু ব্যাপার হলো, আমরা তোমাদের মেহমান হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তাতে রাযী হওনি। কাজেই, আমি ততক্ষণ ঝাঁড়-ফুক করবো না, যতক্ষণ না তোমরা আমার এ কাজের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাঁকে একপাল বকরী প্রদানের অঙ্গীকার করে। তখন তিনি সে ব্যক্তির কাছে উপস্থিত হয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন এবং দংশিত স্থানে থুথু দেন। ফলে, সে ব্যক্তি এমনই সুস্থ হয়ে উঠে, যেন সে বন্ধন মুক্ত হয়ে যায়। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে বিনিময় নির্ধারণ করেছিল, তা আদায় করে দেয়। এ সময় সাহাবীগণ পরস্পর বলেনঃ এগুলো ভাগ- বণ্টন করে নিন। তখন ঝাঁড়-ফুককারী সাহাবী বলেনঃ এখন বণ্টন করবেন না, যতক্ষণ না আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট উপস্থিত হয়ে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেনঃ তোমরা ঐ সূরা দিয়ে ঝাঁড়-ফুক করার উপকারিতা কিরূপ জানলে? তোমরা খুবই ভাল কাজ করেছ। তোমরা বণ্টন নেও এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দাও।
আবু দাউদ শরীফ (ইফা:) ৩৮৬২. কা’নাবী – – – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তখনই তিনি সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে স্বীয় শরীর মুবারক দম করতেন। এরপর যখন তাঁর অসুখ খুবই বৃদ্ধি পায়, তখন আমি তা পাঠ করে, তাঁর হাত দিয়ে তাঁর শরীর বরকতের উদ্দেশ্যে মাসেহ করে দিতাম।





