পুত্রের ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় রাগে-দুঃখে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে ফেললেন মা। মায়ের অবস্থা দেখে ঘরের এক কোণে নীরবে বসে রইলেন পুত্র।
কিছুক্ষণ শোরগোলের পর পুত্রকে ইসলাম ত্যাগ করার কঠোর নির্দেশ দিয়ে মা বললেন, “যতক্ষণ না সে মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ধর্ম ত্যাগ করবে, ততক্ষণ আমি কিছু খাবো না এবং রোদ থেকে ছায়াতেও যাবো না।”
একদিন, দুদিন করে তিন দিন কেটে গেলো। মা খাবার বা পানীয় কিছুই স্পর্শ করলেন না, রোদ থেকে ছায়াতেও এলেন না, এমনকি কারো সাথে কথাও বললেন না।
এ অবস্থায় পুত্র অসম্ভব অস্থির হয়ে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট হাজির হয়ে পুরো ঘটনা খুলে বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দেওয়ার পূর্বেই নাযিল হলো “সূরা আনকাবূত” এর ৮ম আয়াতটিঃ
• “আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো তোমাদের কর্মফল” •
[সূরা আনকাবূত : ৮]
কুরআনের আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর পুত্রের মানসিক অস্থিরতা দূর হয়ে গেলো। তিনি মায়ের কাছে এসে ঘোষণা দিলেন, “সত্য দ্বীন পরিত্যাগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
অবশেষে ইসলামের প্রতি পুত্রের দৃঢ়তা দেখে মায়ের জিদ, অভিমান কেটে গেলো। অনশন এবং পুত্রকে দেওয়া শর্ত পরিত্যাগ করে তিনি নিজেও মুসলমান হয়ে গেলেন।
আল্লাহু আকবার।
.
ইসলামের প্রতি দৃঢ়ভাবে অটল থাকা পুত্রটি হচ্ছেন, সাহাবী সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। যিনি ছিলেন “আশারায়ে মুবাশশারাহ” (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত) দশজন সাহাবীদের একজন। যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কয়েকবার জান্নাতের সুসংবাদ দেন।
___
সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন অদম্য বীর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রায় সকল যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসকিতা এবং বীরত্বের সাথে লড়াই করেন।
বদর যুদ্ধে সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সাঈদ ইবনে আ’সকে হত্যা করে তার তলোয়ারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জমা দিলেন।
এরপর তলোয়ারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি বলেন, “এ তলোয়ার না তোমার, না আমার।”
জবাব শুনে সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কিছুদূর যেতেই “সূরা আনফাল” নাযিল হয়। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে বললেনঃ “তোমার তলোয়ার নিয়ে যাও।”
___
আরবের লোকেরা কারো প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসার প্রকাশস্বরুপ বলতো, “আমার মা-বাবা তোমার প্রতি কুরবান হোক।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উদ্দেশ্যে করে বহু সাহাবী এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যাকে উদ্দেশ্যে করে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন, “আমার মা-বাবা তোমার প্রতি কুরবান হোক।”
___
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে অত্যন্ত ভালবাসতেন। একদিন তাঁকে উদ্দেশ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এই দেখো আমার মামা, তোমরা কেউ এরকম মামা নিয়ে এসো দেখি।” [তিরমিজি]
সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করে বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ, আপনি সা’দ এর দু’আ কবুল করুন, যখন সে দু’আ করবে।” পরবর্তীতে ঐতিহাসিকদের মতে সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর দুআ সত্যে প্রমাণিত হয়েছিলো।
এছাড়াও সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি। তিনি তাঁর সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দান করে দেন।
___
জীবনের অন্তিম সময়ে তিনি তাঁর ছেলেকে একটি পুরাতন জামা পরার ইচ্ছে পোষণ করে বলেছিলেন, “এই জামা পরিয়েই তোমরা আমাকে কাফন দিও। আমি এই জামা গায়ে দিয়ে বদর যুদ্ধে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়েছি। আমার ইচ্ছা, আমি এই জামা গায়ে দিয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হই।”
অতঃপর তাঁর অন্তীম ইচ্ছা ইচ্ছানুযায়ী সে জামা পরিহিত অবস্থায় তাঁকে দাফন করা হয় এবং এরই সাথে ইতি ঘটে ইসলামের ইতিহাসে মহান বীর সা’দ ইবনে ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর।
____
আল্লাহু আ’লাম
রেফারেন্সঃ
১. আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (প্রথম খন্ড)
২. সাহাবাদের জীবনী
৩. তাফসীরে আহসানুল বায়ান (সূরা আনকাবূত : ৮)
৪. hadithoftheday (saad-ibn-waqas)
______
লিখাটি ফেসবুক এর “Know Your Heroes – উম্মাহর নক্ষত্ররাজি” পেইজ থেকে নেয়া






