উম্মাহর নক্ষত্ররাজি : যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাদিআল্লাহু আনহু

By | Thu 28 Safar 1442AH || 15-Oct-2020AD
চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়লো মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বন্দী অথবা হত্যা করে ফেলেছে। আর এ খবর শোনা মাত্রই একজন বালক ক্ষিপ্ত হয়ে উন্মুক্ত তরবারি হাতে হাজির হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে?”
তিনি উত্তর দিলেন, “শুনেছি, আপনি বন্দী অথবা নিহত হয়েছেন।”
সেদিন বালকটির এরূপ আত্মত্যাগ, ভালোবাসা এবং সাহসিকতা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন। তিনি বালকটির জন্য আল্লাহ পাক এর কাছে দুআ করেন।
.
সীরাত লেখকদের বর্ণনামতে, এটিই হচ্ছে প্রথম তরবারি যা আত্মোৎসর্গের উদ্দেশ্যে একজন বালক উন্মুক্ত করেছিলেন। আর সেই বালকটিই হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসের অদম্য বীর যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু)। যিনি ছিলেন আশারায়ে মুবাশশারা (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত) দশজন সাহাবীদের একজন।
___
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। অত্যন্ত বীরত্বের সাথে তিনি ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রায় সকল যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
বদর যুদ্ধ চলাকালীন,
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) শত্রুপক্ষের সাথে সাংঘাতিকভাবে লড়েছিলেন। আঘাতের তীব্রতায় তাঁর সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো এবং তরবারিও ভোঁতা হয়ে গেলো।
মূলত সে দিনের ক্ষত এতটাই গভীর ছিলো, এর ফলে তাঁর শরীরে গর্তের মত হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র উরওয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) উল্লেখ করেন, “আমরা সেই গর্তে আংগুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম।”
___
খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন,
মদীনার ইয়াহুদী গোত্র বনু কুরাইজা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অবস্থা জানার জন্য গুপ্তচর হিসেবে কাউকে পাঠাতে চাইলেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্যে তিনবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তাদের সংবাদ নিয়ে আসতে পারবে?”
প্রত্যেকবারই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, “আনা ইয়া রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ “আমি”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আগ্রহে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, “প্রত্যেক নবীরই একজন হাওয়ারী (সঙ্গী/সাথী/অনুসারী) থাকে। আমার হাওয়ারী হচ্ছে যুবাইর।”
[ Every Prophet has a disciple, and verily my disciple is Az-Zubair bin al-Awwām ]
সুবহানআল্লাহ।
বস্তুতঃ একজন “হাওয়ারী” হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, এর সবই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) র মধ্যে বিদ্যমান ছিলো।
___
মূলত একজন যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু)-র অন্তর ছিলো অত্যন্ত কোমল। উত্তম চরিত্র, তাকওয়া, দানশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সাহসীকতার সমন্বয়ে তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁর এমন দুঃসাহসিক হয়ে বেড়ে উঠার পিছনে ছিলো মা সাফ্যিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রাদিআল্লাহু আনহা) এর অবদান। শৈশব থেকেই তিনি ছেলেকে এমনভাবে প্রতিপালন করেন, যাতে বড় হয়ে সে একজন দৃঢ়-সংকল্প এবং আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হয়ে উঠেন। তাঁর প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। সত্যিকার অর্থেই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) হয়ে উঠেছিলেন একজন দুঃসাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং অদম্য বীর।
_____
আল্লাহু আ’লাম
রেফারেন্সঃ
১. আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (প্রথমখন্ড)
২. সাহাবাদের জীবনী
৩. The life and martyrdom of Zubayr ibn al-`Awwam (Radi-Allahu anhu)
_____
লিখাটি ফেসবুক এর “Know Your Heroes – উম্মাহর নক্ষত্ররাজি” পেইজ থেকে নেয়া
Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*