আকীকা বিষয়ক কিছু প্রশ্ন

By | Thu 14 Dhul Hijjah 1437AH || 15-Sep-2016AD

প্রশ্ন ৩৩৯১: আমার জানার বিষয় হল, ক) আকীকা কী ও তার হুকুম কী? খ) আকীকা আদায়ের সময় নির্দিষ্ট আছে কি না এবং তা আদায়ের নিয়ম কী? গ) নিজের আকীকা নিজেই আদায় করতে পারবে নাকি তা পিতাকেই আদায় করতে হবে এবং এ আকীকার গোশত পিতামাতা ও আত্মীয়রা খেতে পারবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্ন ৩৫০০: নবজাতক বাচ্চার চুল ৭ম দিন কাটা কী৭ম দিনের আগে বা পরে কাটা যাবে কি নাচুলের ওজন পরিমাণ রূপা-সোনা সদকা করার বিধান কীআর এর মধ্যে কোনো হিকমত আছে কিযদি এক বছর পরে আকীকা করা হয় তাহলে ঐ সময়ও কি চুল কেটে তার সমান রূপা-সোনা সদকা করতে হবেএই চুল কাটা এবং আকীকা উভয়টি একসাথে করতে হবে নাকি আগে পিছে করলেও হবে। অর্থাৎ ৭ম দিনে চুল কাটা হল আর ১ বছর পর আকীকা করা হল। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।


প্রশ্ন ৩৩৯১: আমার জানার বিষয় হলক) আকীকা কী ও তার হুকুম কীখ) আকীকা আদায়ের সময় নির্দিষ্ট আছে কি না এবং তা আদায়ের নিয়ম কীগ) নিজের আকীকা নিজেই আদায় করতে পারবে নাকি তা পিতাকেই আদায় করতে হবে এবং এ আকীকার গোশত পিতামাতা ও আত্মীয়রা খেতে পারবে কিজানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর:

সন্তান জন্মের পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে জন্মের সপ্তম দিনে পশু যবাই করাকে আকীকা বলে। আকীকা করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সন্তানের আকীকা করার ইচ্ছা করে সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৯৬১

অন্য হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্তানের সাথে আকীকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৪৭২

সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকীকা করা উত্তম। জামে তিরমিযীর এক হাদীসে সপ্তম দিনে আকীকা করার কথা বলা হয়েছে। -হাদীস : ১৫২২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন রা.-এর আকীকা সপ্তম দিনে করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৩৪

তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকীকা করা উত্তম।

সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আকীকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯

অবশ্য একুশ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তীতেও তা আদায় করা যাবে।

সন্তানের আকীকা করার দায়িত্ব তার পিতার। অবশ্য অন্য কেউ বা নিজেও নিজের আকীকা করা জায়েয আছে।

আকীকার গোশত সন্তানের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন সকলেই খেতে পারবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকীকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে বলতে শুনেছি, … আকীকার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে। … আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি সদকা করে দিতে হবে? তিনি বললেন, না,তুমি চাইলে খেতে পার এবং হাদিয়াও দিতে পার।… (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৯৬৯)

-ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/৩৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ৩০/২৭৬; তুহফাতুল মাওদূদ বিআহকামিল মাওলূদ ৭৮


প্রশ্ন ৩৫০০: নবজাতক বাচ্চার চুল ৭ম দিন কাটা কী৭ম দিনের আগে বা পরে কাটা যাবে কি নাচুলের ওজন পরিমাণ রূপা-সোনা সদকা করার বিধান কীআর এর মধ্যে কোনো হিকমত আছে কিযদি এক বছর পরে আকীকা করা হয় তাহলে ঐ সময়ও কি চুল কেটে তার সমান রূপা-সোনা সদকা করতে হবেএই চুল কাটা এবং আকীকা উভয়টি একসাথে করতে হবে নাকি আগে পিছে করলেও হবে। অর্থাৎ ৭ম দিনে চুল কাটা হল আর ১ বছর পর আকীকা করা হল। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর:

সন্তান জন্মের ৭ম দিনে অভিভাবকের দায়িত্ব হল, সন্তানের আকীকা করা, মাথার চুল মুণ্ডন করা এবং তার সুন্দর নাম রাখা।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকীকার সাথে  দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, নাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২

সপ্তম দিনে আকীকা করা, মাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে এ তিনটির কোনোটি অপরটি সাথে শর্তযুক্ত নয়। তাই কারো আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে সে যদি ৭ম দিনে আকীকা করতে না পারে তাহলেও ঐ দিন সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দিবে এবং নামও রাখবে। আকীকা করতে বিলম্ব হলেও এসব কাজে বিলম্ব করবে না।

আর হাদীস শরীফে যেহেতু সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করতে বলা হয়েছে তাই সপ্তম দিনের আগে মুণ্ডন না করাই উচিত।

মাথা মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা.-এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা রা.-কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৯

অপর এক হাদীসে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার কথাও এসেছে। -আলমুজামুল আওসাত, হাদীস ৫৫৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৬২০৪; ইলাউস সুনান ১৭/১১৯

রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার হেকমত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হল, উক্ত সদকার হেকমত সম্পর্কে হাদীস শরীফে যেহেতু কিছু বলা হয়নি তাই এর রহস্য বা হেকমত অনুসন্ধানের পিছনে না পড়াই ভালো। বান্দার কাজ হল, বিধি-বিধানের হেকমতের পিছনে না পড়ে শরীয়তের হুকুম পালন করে যাওয়া।

অবশ্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ.-এর একটি কারণ এই লিখেছেন যে, সন্তান যে চুলসহ ভূমিষ্ট হয়েছিল তা কেটে ফেলার মাধ্যমে সন্তান একটি অবস্থানে পদার্পণ করে। তাই এর শুকরিয়াস্বরূপ ঐ চুলের বিনিময়ে সদকা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/১৪৫)। আর কোনো কারণবশত বাচ্চার চুল যদি সপ্তম দিনে কাটা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সপ্তম দিনের চুলের ওযন অনুমানে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করে দিবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*