গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার বিধিবিধান

By | Tue 20 Muharram 1442AH || 8-Sep-2020AD

গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার বিধিবিধান

Maolana Abdullah Mahmud

.
.
গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْفِطْرَةُ خَمْسٌ : الْخِتَانُ وَالِاسْتِحْدَادُ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ
ফিতরত পাঁচটি : খাতনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নিম্নের জন্য), বগলের লোম তুলে ফেলা, গোঁফ ছোটো করা ও নখ কাটা। [১]
.
عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ : قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ ، وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ ، وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ ، وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ». يَعْنِى الاِسْتِنْجَاءَ بِالْمَاءِ. قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ : وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ.
ফিতরাহ অন্তর্ভূক্ত জিনিস দশটি : গোঁফ ছোটো করা, দাড়ি ছেড়ে দেওয়া, মিসওয়াক করা, পানি দ্বারা নাক ঝাড়া, নখ কাটা, আঙুলের গিরাসমূহ ধোয়া, বগলের লোম তুলে ফেলা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, পানি দ্বারা ইস্তিনজা করা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দশমটি ভুলে গিয়েছি। তবে সম্ভবত তা কুলি করা। [২]
.
.
গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার বিধান :
.
ইমাম নাবাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘সবার ঐকমত্যে গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা সুন্নাত। তবে কারো স্বামী তার স্ত্রীকে পরিষ্কার করার আদেশ দিলে, সেই মহিলার ওপর তা পরিষ্কার করা ওয়াজিব।’ [৩] ইমাম নাবাবী রাহিমাহুল্লাহ ছাড়া আরও অনেকেই সুন্নাত হওয়ার পক্ষে ইজমার দাবী করেছেন। তবে ইমাম ইবন হাজার আসকালানী উল্লেখ করেছেন, ইমাম ইবনুল আরাবীর মতে তা ওয়াজিব। [৪]
.
.
পরিষ্কার করার সর্বোচ্চ সময়সীমা :
.
গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার সর্বোচ্চ সময়সীমা হচ্ছে, ৪০ দিন। সাহাবী আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- حَلْقَ الْعَانَةِ وَتَقْلِيمَ الأَظْفَارِ وَقَصَّ الشَّارِبِ وَنَتْفَ الإِبْطِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا مَرَّةً.
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, গোঁফ ছোটো করা ও বগলের লোম তুলে ফেলার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন ৪০ দিন। [৫]
.
.
৪০ দিন অতিক্রমকারীর বিধান :
.
৪০ দিন অতিক্রম করার বিধান নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। একদলের মতে তা মাকরূহ। এটি শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাবের মত।
.
দ্বিতীয় মত অনুযায়ী ৪০ দিন অতিক্রম করা হারাম। এটি হানাফী মাযহাব, ইমাম শাওকানী ও ইমাম বিন বাযের মত। আমার কাছে এ মতটি শক্তিশালী মনে হয়। কারণ, হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ দিন তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা হারাম ও নাফারমানী। (আল্লাহু আলাম)
.
স্মর্তব্য : আমার কাছে মনে হয়, সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন অতিক্রম করা হারাম হলে গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা ওয়াজিব হওয়া যুক্তিযুক্ত। কারণ, মূল বিধান সুন্নাত হলে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করা হারাম ও নাফামানী হয় না। ইমাম বিন বাযের কথা থেকেও এমনটা বোঝা যায়। (আল্লাহু আলাম) [৬]
.
তবে অনেক এলাকায় প্রচলিত আছে, ‘৪০ দিন অতিক্রম করলে কোনো ইবাদত কবুল হয় না।’ একথা ঠিক নয়।
.
.
কী দ্বারা পরিষ্কার করবে?
.
হাদীসে শব্দ এসেছে, (َالِاسْتِحْدَادُ)। আর এর অর্থ হলো ক্ষুর ব্যবহার করা। তাই সবার ঐকমত্যে পুরুষদের জন্য ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহার করা উত্তম। তবে কেউ ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহার না করে অন্য কোনো মাধ্যমে তা পরিষ্কার করলে বা খাটো করলে, সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
.
তবে মহিলাদের জন্য কী ব্যবহার করা উত্তম, তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয়, যারা মহিলাদের জন্য ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহার করা উত্তম বলেছেন, তাদের মত বেশি সঠিক। কারণ, হাদীসে পুরুষ ও মহিলার মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। তবে ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহার করলে কোনো সমস্যা হলে ভিন্ন কথা। (আল্লাহু আলাম)
.
.
গুপ্তাঙ্গের লোমের পরিধি :
.
হাদীসে বলা হয়েছে (الْعَانَةِ) বা ‘আল-আনাহ’। ‘আল-আনাহ’ এর পরিধি কতটুকু, তা নিয়ে হালকা মতপার্থক্য থাকলেও প্রায় সকল ভাষাবিদ ও ফকীহর মতে ‘আল-আনাহ’ বলতে বোঝায়, সামনের লজ্জাস্থানের আশেপাশের লোমকে; পেছনের লোমকে ‘আল-আনাহ’ বলা হয় না। তাই ইমাম ইবনুল আরাবী ও ইমাম ফাকিহী বলেছেন, পেছনের লোম পরিষ্কার করা শরীআত-সম্মত নয়।
.
তবে একদল ফকীহ বলেছেন, ‘হাদীস দ্বারা পেছনের লোম পরিষ্কার করার কথা প্রমাণ না হলেও তা পরিষ্কার করা উচিত। যাতে তাতে কোনো ময়লা ও নাপাকি লেগে না থাকে এবং যেন খুব সহজেই তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।’ এ মতটি আমার কাছে ইসলামী শরীআতের অনুকূলে মনে হয়। (আল্লাহু আলাম)
.
.
কোন দিক থেকে পরিষ্কার শুরু করতে হবে?
.
ফকীহগণ বলেছেন, ‘ডান দিক থেকে পরিষ্কার শুরু করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতেন।’ তবে আমার কাছে বাম দিক থেকে শুরু করাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কারণ, গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা খারাপ ও নোংরা জিনিস। ফকীহগণও এটাকে খারাপ ও নোংরা মনে করেন বলে মনে হয়। কারণ, তারা বলেছেন পরিষ্কার করার সময় খুব গোপনে পরিষ্কার করবে এবং কেউ যেন না জানতে পারে সেজন্য লোম পুতে দেবে বা লোকচক্ষুর আড়াল করে দেবে। আর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খারাপ ও নোংরা কাজ বাম দিক থেকে শুরু করতেন। এদিকে লক্ষ রেখে একদল ফকীহ বলেছেন, দাত ব্রাশ করা বা মিসওয়াক করার সময় বাম দিক থেকে শুরু করবে। কারণ, তা মূলত নোংরা ও খারাপ জিনিস পরিষ্কার করা। (আল্লাহু আলাম)
.
.
কারো মাধ্যমে পরিষ্কার করিয়ে নেওয়ার বিধান :
.
গুপ্তাঙ্গের লোম কারো মাধ্যমে পরিষ্কার করানো যাবে না। কেননা, কারো সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ করা হারাম। তবে স্বামী-স্ত্রী বা যাদের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ করা বৈধ তাদের মাধ্যমে পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারে। তারপরও তা অনুত্তম হবে।
.
.
তথ্যসূত্র
[১] সহীহুল বুখারী, ৫৮৮৯; সহীহ মুসলিম, ২৫৭
[২] সহীহ মুসলিম, ৪৯২
[৩] আল-মাজমূ, ১/২৮৯
[৪] ফাতহুল বারী, ১০/৩৪০
[৫] সুনানু আবী দাউদ, ৪২০২; সহীহ মুসলিমেও (২৫৮) হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তবে তাতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্ধারণ করেছেন বলা হয়নি।
[৬] মাজমূউল ফাতওয়া লিল-ইমাম বিন বায, ১০/৫০

 

Direct Link: Facebook

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*