بسم الله الرحمن الرحيم
আজকে দাড়ি রাখাকে আমরা শুধুমাত্র হুজুরদের কাজ বলে পরিত্যাগ করেছি, মাদ্রাসা পড়ুয়াদের একচ্ছত্র সম্পত্তি বলে গণ্য করি, দুনিয়াবি শিক্ষিতদের কাছে দাড়ি রাখা ও টাকনুর উপর কাপড় পরা যেন তাদের স্মার্টনেসের পথে বিরাট একটি বাঁধা। দাড়ি ও টাকনুর উপর কাপড় পরা যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনেক বড় একটি হুকুম তা আমরা কেয়ারই করি না। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটির দাড়ি ছিল, সবচেয়ে স্মার্ট মানুষটির জামা টাকনুর উপরে ছিল, মাথায় ছিল টুপি আর পাগড়ি, গায়ে ছিল লম্বা ঢিলেঢালা জামা(পাঞ্জাবি/জুব্বা)।
এদের মধ্যে কিছু সুন্নাহ আবশ্যিক তথা ওয়াজিব যা আদায় না করলে গুনাহ হবে আর কিছু সুন্নাহ আদায় না করলে গুনাহ হবে না কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মাত হিসেবে আদায় করা আমাদের বিবেকের দাবি, ঈমানের দাবি।
“যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে।”(তিরমিযী, মিশকাত)
হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আমার সুন্নতের পরোয়া করবে না সে আমার উম্মত নয়।” (বুখারী, মুসলিম)
এই নোটের মূল টপিক হল দাড়ি রাখা । তাই এই গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ্।
দাড়ি রাখার সীমানাঃ
দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কমপক্ষে এক মুষ্টি রাখা ওয়াজিব, এরচেয়ে কম রাখা নাজায়েজ। বেশি রাখা জায়েজ। দাড়ির চৌহদ্দি হলো গালের শেষ ভাগে এবং গলার শুরু ভাগে বাম কান থেকে ডান কান পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা হাড্ডিতে গজানো চুল হলো দাড়ির সীমারেখা। বাকিটা দাড়ি নয়। থুতনির উপরের ছোট চুল কাটাও উচিত নয়। [মিশকাতঃ ২/৩৮০, আবু দাউদ ১/৮৩]
ফাতওয়ায়ে শামী-৯-৫৮৩৪,ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৩৫৮৫, আল বাহরুর রায়েক-২/৪৯০৬. ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/৪৮৪, কিফায়াতুল মুফতী-৯/১৭৫
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমান হতে হবে । এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমামগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
হাদীসের আলোকে দাড়ির হুকুমঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দশটি বিষয় ‘ফিতরাতে’র অন্তর্ভুক্ত : মোচ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধৌত করা, বগলের নীচের চুল তুলে ফেলা, নাভীর নীচের চুল মুন্ডানো, (বাথরুমের প্রয়োজন পূরণের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, যদি না তা হয় ‘কুলি করা।’ [সহীহ মুসলিম]
আরবীতে ‘ফিতরাত’ শব্দের অর্থ স্বভাব। আল্লাহ রাববুল আলামীন যে উত্তম মানবীয় স্বভাব সৃষ্টি করেছেন তার সর্বোত্তম নিদর্শন নবী ও রাসূলগণ। এ কারণে ‘ফিতরাত’ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে আদর্শ ও অনুকরণীয় স্বভাব, তথা নবী ও রাসূলগণের স্বভাব।
তো হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মোচ কাটা ও দাড়ি রাখাই হচ্ছে পুরুষের স্বাভাবিক অবস্থা এবং সকল নবী-রাসূলের সুন্নাহ ও আদর্শ, যাঁদের অনুসরণের আদেশ কুরআন মজীদে করা হয়েছে।
এই হাদীস থেকে আরো বোঝা যায়, দাড়ি মুন্ডানো হচ্ছে একটি বিকৃতি, কিন্তু ব্যাপক বিস্তারের কারণে অন্য অনেকবিকৃতির মতো এটাও এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে; বরং পুরুষের শ্মশ্রূমন্ডিত স্বাভাবিক রূপটিই এখন দ্বিধা ওসংকোচের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর।(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুশরিকদের বিরোধিতা কর, দাঁড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫,মুসলিম)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে গোঁফকাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী শরীফ)
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দাড়ি বাড়াও, গোঁফ কাট এবং এক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। (মুসনাদে আহমদ)
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস : ২৬০১৩
উল্লেখ্য, পারস্য সম্রাটের উদ্দেশে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্র পাঠিয়েছিলেন। এ ঘটনা সহীহ বুখারীতে আছে। ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রাহ.-এর সূত্রেই তা বর্ণিত হয়েছে। তবে সেখানে তা আছে সংক্ষেপে। এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে আছে ইতিহাসের কিতাবে। ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. যায়েদ ইবনে আবী হাবীব রাহ.-এর সূত্রে তা বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে,
ইয়েমেনের শাসকের পক্ষ থেকে দু’জন লোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল। তাদের দাড়ি মুন্ডানো ছিল এবং মোচ লম্বা ছিল। তাদের চেহারার দিকে তাকাতেও আল্লাহর রাসূলের কষ্ট হচ্ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের মরণ হোক! এ কাজ করতে কে তোমাদেরকে বলেছে? তারা বলল, আমাদের প্রভু (কিসরা) আমাদেরকে আদেশ করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিন্তু আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন, দাড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার। -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০
কোনো কোনো হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার আদেশের সাথে মুশরিকদের বিরোধিতার কথাও বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, দাড়ি যেমন শরীয়তের একটি বিধান তেমনি তা মুসলমানের পরিচয় চিহ্ন, যার দ্বারা মুমিন-মুসলমানকে প্রথম দৃষ্টিতেই আলাদা করে চেনা যাবে। এটি মুসলমানের জাতীয় চেতনাবাহী একটি বিষয়।
এক নজরে দাড়ি:
১. দাড়ি বাড়াও। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
২. দাড়ি পূর্ণ কর। (মুসলিম শরীফ)
৩. দাড়ি ঝুলন্ত ও লম্বা রাখ। (মুসলিম শরীফ)
৪. দাড়ি বহার রাখ। (মাজমাউল বিহার)
৫. দাড়ি বেশী রাখ (বুখারী,মুসলিম)
৬. দাড়িকে ছাড়,অর্থাৎ কর্তন করো না। (তাবরানী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাড়ি
১) হযরত আলী রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে,“তিনি অনেক বড় দাড়ির অধিকারী ছিলেন। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৩১১,মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-৯৪৬]
২) হযরত জাবির বিন সামুরা রাঃ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ছিল বেশি বা ঘন। [সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৬২৩০,মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৫৬]
দাড়ি কি কাটা যাবে???
এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।
আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯
নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলতেন।-প্রাগুক্ত হাদীস : ২৫৯৯৭
হাসান বসরী রাহ. বলেন, তাঁরা (সাহাবা-তাবেয়ীগণ) মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার অবকাশ দিতেন।-প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯৫
কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩]
এখানে যদিও হজ্ব ওউমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের(রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে। (ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০পৃঃ ৩৬২)
কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে।
দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমলী নমুনা।
সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকেই প্রমাণিত ।
হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন ।(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।
উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীথেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এথেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
দাঁড়ি ও ফুক্বাহাদের উক্তি:
১. হানাফী মাযহাবের কিতাব শরহে মুনহাল ও শরহে মানজুমাতুর আদবের মধ্যে লিখেছেন, নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল দাড়ি মুন্ডানো হারাম।
২. মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী রহ. তার প্রণিত “’”দাড়ি কী কদর ও কীমত” কিতাবে চার মাজহাবের ফক্বীহগণের মতামত শাফেয়ী মাজাহাবের প্রামান্য গ্রন্থ “আল ওবাব” হতে উদ্বৃত করেছেন :
ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম।
৩. মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা)
৪. হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।
অনুরূপ অন্যান্য গ্রন্থাকারও দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মাননীয় ইমামদের ইজমা (ঐকমত) বর্ণনা করেছেন।
দাড়ি না রাখা, মুন্ডিয়ে ফেলা বা একমুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠেরচেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমলনামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্বপর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠপরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষনপর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহসাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী, যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।
শেষ করছি এই বিষয়ে ২ টি ঘটনা দিয়ে :
ঘটনা ১: এই যুগের সৌদির একজন আলেম শাইখ বিন বায(রঃ) এর একটি ঘটনা……………
শাইখ ইবনে বায ( রাহঃ)যখন তার শেষ জীবনে উনার ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন তিনি চিকিৎসার জন্য আমেরিকাতে যান। তখন ডাক্তার তাকে বলেন, surgical operation এর জন্য শরীরের সব পশম ফেলে দিতে হবে ! একটি পশম ও রাখা যাবে নাহ! শাইখ ইবনে বায বলেন, দাঁড়ী ও কি রাখা যাবে নাহ! ডাক্তার জবাবে বলেন, নাহ! তখন, শাইখ ইবনে বায বলেন, মৃত্যু অবধারিত! আমাকে সৌদিতেই পাঁঠিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু আমি দাঁড়ী বিহীন অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে সাক্ষাত করবো, এই ব্যাপারে লজ্জিত এবং ভীত । আল্লাহু আকবর!!!
ঘটনা ২: সৌদির প্রখ্যাত আলিম শাইখ সালিহ আল ফাওজান(হাফিযাহুল্লাহ) কে ফোন করে একজন বোন প্রশ্ন করেন, এক লোক দাঁড়ি রাখে না, সে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। দাঁড়ি না রাখার কারণে তিনি তার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিধান কি? এটা শুনে শাইখ ফাওজান বললেনঃ সে ঠিক কাজই করেছে। কারণ, দাঁড়ি রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারকে যে অবহেলা করে তার মানে সে দ্বীনের অন্য ব্যাপারগুলোতেও গাফিলতি করবে। আর এর থেকে যে ছেলে-মেয়েগুলো হবে তারাও সে রকমই হবে। তাই একে বিয়ে না করে অপেক্ষা করা উচিত, এর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে আল্লাহ এর থেকে ভালো কাউকে মিলিয়ে দিবেন। ভাইয়েরা একটু ভেবে দেখুন, আলিমরা হচ্ছেন নবী রাসুলদের ওয়ারিশ। শাইখ ফাওজানের মতো একজন যুগশ্রেষ্ঠ আলিম উপদেশ দিয়েছেন, দাঁড়ি না রাখলে তাকে বিয়ে না করে অন্য কারো অপেক্ষা করতে। আর আপনি দাঁড়ি রাখাকে হালকা বিষয় মনে করছেন? চাকরি হলে রাখবেন, বিয়ের পরে রাখবেন এই অজুহাতে আর কতোদিন শেইভ করে, দাড়ি কামিয়ে হারাম কাজ করবেন? এর মাঝে যদি মৃত্যু এসে হাজির হয় তবে কি জবাব দিবেন কাল হাশরের ময়দানে?
আজ থেকেই নিয়াত করুন জীবনে আর দাড়ি কাটবেন না। কাছের মানুষদের একবার হলেও বলি, মানা না মানা উনাদের ব্যাপার। ইয়েমেন থেকে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে আসা দুইজন লোকের দাড়ি কামানো ছিল। তাদের দিকে তাকাতে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কষ্ট হচ্ছিল। যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুপারিশ ছাড়া আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো না, উনার এমন মহামূল্যবান সুন্নাহকে(ফিক্বহি ভাষায় ওয়াজিব / ফরয) আমরা কিভাবে বর্জন করতে পারি?
আল্লাহতা আলা আমাদেরকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন এবং ইসলামী লেবাস-পোশাক খুশিমনে গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
[Collected from a Brother’s Facebook Post]





