প্রশ্ন ৩৮৭১: আমাদের এলাকায় একটি বড় পুকুর আছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এক দু বার তাতে মাছ শিকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে টিকেট ছেড়ে থাকে। টিকেট সংগ্রহকারীগণ নির্ধারিত দিনে বড়শি দিয়ে ঐ পুকুর থেকে মাছ শিকার করেন। যে যা শিকার করতে পারে সেটা তার। জানার বিষয় হল, এই পদ্ধতিটি কি শরীয়তসম্মত?
উত্তর: মাছ শিকারের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে কে কতটুকু মাছ পাবে তা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। বরং একেবারে না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। যা ধোঁকা ও শরীয়ত নিষিদ্ধ ‘আলগারারে’র অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া জুয়ার সাথেও এর সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ এতে কে কী পরিমাণ মাছ ধরতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কেউ হয়ত পাবেই না। অথচ টাকা দিয়েছে সবাই। এই টাকা হয়ত পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। আবার এমনও হতে পারে যে, কেউ অনেক বেশি মাছ পেয়ে যাবে। যেহেতু এই অনিশ্চয়তা মূল লেনদেনের সাথেই জড়িত তাই তা নাজায়েয। মুসলমানদের জন্য তা পরিহার করা কর্তব্য।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫১৩; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৯৪; আদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; আননাহরুল ফায়েক ৩/৪১৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬
প্রশ্ন ৩৮৬৭: আমার এক বন্ধুর কাপড় তৈরির মিল আছে। সে তার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমার ইচ্ছা হল, তার থেকে মেশিনটি কিনে তার কাছেই আবার ভাড়ায় দিয়ে দিব। আমার জন্য এটা জায়েয হবে কি না?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি সাময়িক সময়ের জন্য টাকা দিয়ে অতিরিক্ত গ্রহণই উদ্দেশ্য হয় এবং এর ছূতা হিসেবে লেনদেনটি করা হয় অর্থাৎ মেশিনটি ক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া সবই যদি ছূতা হিসেবে অবলম্বন করা হয় তবে তা বৈধ হবে না।
কিন্তু যদি এক্ষেত্রে লেনদেনটি ছূতা হিসেবে গ্রহণ করা না হয়; বরং প্রকৃত অর্থেই ক্রয়-বিক্রয় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা করা যাবে-
১। ক্রয়ের সাথে ভাড়ার শর্ত করা যাবে না। অর্থাৎ ক্রয়ের সময় এ কথা বলা যাবে না যে, মেশিনটি কিনব তবে শর্ত হল, তোমার কারখানায় এটিকে ভাড়া হিসেবে রাখতে হবে।
২। ক্রয়ের পর মেশিনটি আগে আপনার দখলে বুঝে নিতে হবে। ক্রয়ের পর যে কারো কাছে ভাড়া দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেমনিভাবে অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন তদ্রূপ পূর্বের মালিকের নিকটও তা ভাড়া দিতে পারবেন। ক্রয়ের পর পূর্বের মালিকের কাছে ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে পৃথকভাবে ভাড়া চুক্তি করে নিতে হবে।
৩। কারখানার মালিক মেশিনটি ভাড়া না রাখতে চাইলে তাকে এর জন্য বাধ্য করা যাবে না।
৪। বাস্তবসম্মত মূল্যে বেচা-কেনা হতে হবে। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও ভাড়া ধরা যাবে না।
-আলমাআইরুশ শরইয়াহ ১৪৫; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪৭
প্রশ্ন ৩৮৬৮: আমি আমার বাড়ির ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকি। কয়েকমাস থেকে তা খালি পড়ে আছে। গত সপ্তাহে এক ভাড়াটিয়ার সাথে কথা হয়েছে যে, সে একটি ভাড়া নিবে। এখন জানতে পারি যে, সে হিন্দু। আমার জানার বিষয় হল, হিন্দুকে ঘর ভাড়া দেওয়া কি জায়েয?
উত্তর: জ্বী, অমুসলিমকে ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েয। এবং তার থেকে প্রাপ্ত ভাড়াও বৈধ। তবে এমন কাউকে ভাড়া দেওয়া যাবে না যার দ্বারা মুসলিম সমাজে বিধর্মীদের আচার-অনুষ্ঠান প্রচার পায় কিংবা যার দ্বারা মুসলমানদের দ্বীনী অনুভূতিতে আঘাত আসে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৫০






