লিখাটি প্রস্তুত করেছেন মুফতি মুহাম্মদ আবুল হাসান
পানি তিন প্রকার
১. সাধারণ পানি
২. নাপাক পানি
৩. ব্যবহৃত পানি
১. সাধারণ পানি ও তার বিধান : সাধারণ পানি বলতে এমন পানি বুঝায় যার বর্ণ,গন্ধ,স্বাদ এবং রং স্বাভাবিক । যেমন – সমুদ্রের পানি, নদী নালার পানি, ঝরনা কুয়া ফুয়ারা ও বৃষ্টির পানি।
এই পানির বিধান হলো এই পানি নিজে পবিত্র এবং অন্য কেউ পবিত্রকারী।
পবিত্র কুরআন পাকের এরশাদ:
إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ-
“যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা।” [সুরাহ আনফাল আয়াত ১১]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُورًا-
“এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি।” [সুরাহ আল ফুরকান : আয়াত ৪৮]
হাদিস শরীফে আছে : হুজুর ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো সমুদ্রের পানি সম্পর্কে, তিনি বললেন “সমুদ্রের পানি দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা যায়।” [তিরমিযী শরিফ – খন্ড ১ – হাদিস নং ৬৯ (ইফা)]
২. নাপাক পানি ও তার বিধান : নাপাক বস্তু মিশ্রনের কারণে পানির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট অর্থাৎ বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ পরিবর্তন হয়ে গেলে সে পানি নাপাক হয়ে যায়, এ বিষয়ে উম্মাহর আলিমগনের ইজমা রয়েছে।
আল্লামা শাওকান (রহ) বলেন “নাপাকি মিশ্রিত হওয়ার কারণে যে পানির বর্ণ কিংবা গন্ধ কিংবা স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে তা নাপাক হওয়ার বিষয়ে উম্মাহর ইজমা রয়েছে।” [নায়্নুল আওতার ১/৩৫]
এই মাসয়ালাটি বেশী পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন – নদী, ঝিল কিংবা বড় হাউজের পানি নাপাকির সংমিশ্রনে উপরোক্ত তিন বৈশিষ্ট্যের কোনো একটি পরিবর্তিত হলে এই এই পানি নাপাক বলে গণ্য হয়, কিন্তু স্বল্প পানি যথা বালতি,কলস ইত্যাদিতে সংরক্ষিত পানি নাপাক হওয়ার জন্য এটা শর্ত নয়,বরং সামান্য নাপাকি মিশ্রিত হলেই তা নাপাক হয়ে যায়। ইহার প্রমান পবিত্র হাদিস শরিফ:
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত “রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন তোমরা যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হও তখন পাত্রে হাত দেওয়ার আগে তিনবার হাত ধুয়ে নিবে কেননা তোমাদের জানা নাই যে, ঘুমন্ত অবস্থায় হাত কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছে ।” [সহীহ মুসলিম – খন্ড ২ – হাদিস নং ৫৫০ (ইফা)]
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, অল্প পানি এতটুকু নাপাক দ্বারাই নাপাক হয়ে যায় যা হাতে লেগে থাকতে পারে। আর একথা বলাই বাহুল্য যে হাতে লেগে থাকা সামান্য নাপাকিতে পানির বর্ণ গন্ধ স্বাদ পরিবর্তিত হয় না ।
৩. ব্যবহৃত পানি ও তার বিধান : যে পানি দ্বারা একবার ওজু বা গোসল করা হয়েছে তা হলো ব্যবহৃত পানি।
তার বিধান হলো এ পানি নিজে পাক (যদি তার সাথে কোনো নাপাকী মিশ্রিত না হয়ে থাকে) কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয় বার পবিত্রতা অর্জন করা যায় না ।
(হাদীস ১) হযরত আবু মুসা (রা) বলেন -রাসুল ﷺ একটি পাত্রে পানি আনতে বললেন। এরপর তিনি তাতে হাত ও মুখ মন্ডল ধৌত করিলেন এবং তাতে কুলি করিলেন। তারপর তাদের কে ( আবু মুসা (রা) ও বিলাল (রা) ) বললেন এখান থেকে কিছু পানি পান কর এবং অবশিষ্ট পানি চেহারা ও সীনার উপর ঢেলে দাও । [সহীহ বুখারী ১/৩১-৩২]
(হাদীস ২) আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন তোমাদের কেউ যেন আবদ্ব পানিতে ফরজ গোসল না করে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল হে আবু হুরায়রা তাহলে কিভাবে? তিনি উত্তরে বললেন প্রয়োজন পরিমান পানি তুলে নিয়ে আসবে। [সহীহ মুসলিম ১/১৩৮]
প্রথম হাদীস থেকে জানা গেলো যে ব্যবহৃত পানি পাক, তা পান করা যায় এবং শরীরে প্রবাহিত করা যায়।
দ্বিতীয় হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, ব্যবহৃত পানি দ্বিতীয় বার পবিত্রতা অর্জনের উপযুক্ত থাকে না , এতএব এই পানি নিজে পাক অন্যকে পাক করতে পারে না।
ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ), হাসান বসরী (রহ) এবং ইমাম যুহরী (রহ) ও অনান্য ফকীহ্ গণ ও এইমত পোষণ করেন।






মাশাআল্লাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন
জাযাকাল্লাহ খাইরন