উম্মাহর নক্ষত্ররাজি : উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা

By | Thu 28 Safar 1442AH || 15-Oct-2020AD
১.
আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্নেহের শিশুপুত্র আবু উমায়ের ইন্তিকাল করলেন।
কিন্তু তাঁর স্ত্রী বাড়ির লোকদের বললেন,
“তোমরা আবু তালহা কে তাঁর পুত্রের ব্যাপারে কিছু বলো না। আমি স্বয়ং তাঁকে এ কথা বলব।”
আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেন। স্ত্রী তাঁকে রাতের খাবার পরিবেশন করালেন। এরপর সাজসজ্জা করে তাঁর কাছে এলেন এবং উভয়ে মিলিত হলেন। অতঃপর যখন দেখলেন স্বামী তৃপ্ত, তখন তিনি বললেন,
– “হে আবু তালহা! আচ্ছা আপনি বলুন! যদি কোনো সম্প্রদায় কোনো পরিবারকে কোনো জিনিস (সাময়িকভাবে) ধার দেয়, অতঃপর তারা তাদের ধার দেওয়া জিনিস ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে কি তাদের জন্য তা না দেওয়ার অধিকার আছে?”
– তিনি জবাব দিলেন “না”।
– আপনি নিজ পুত্রের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। (অর্থাৎ আপনার পুত্রও আল্লাহর দেওয়া আমানত ছিলো, তিনি তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন।)
.
সুবহান আল্লাহ। জীবনের কঠিন সময়ে “সাবরুন জামিল” (Beautiful Sabr) এর অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সে মহিয়সী নারী/স্ত্রী/মা-টিই হচ্ছেন উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। পুত্রের ইন্তিকালে যিনি নিজে আল্লাহ তা’আলা- র ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থেকেছেন, সবর করেছেন এবং স্বামীকেও সবরে উৎসাহ প্রদান করেছেন।
২.
উহুদের যুদ্ধ চলাকালীন,
মুসলিম বাহিনীর বিপর্যয় সংঘটিত হলে উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ও উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে মশক ভরে পানি এনে আহতদের পান করাতে দেখেছি। মশক খালি হয়ে গেলে তাঁরা আবার ভরে এনে পান করিয়েছেন। [১]
হুনাইন যুদ্ধ চলাকালীন,
উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) খঞ্জর হাতে স্বামী আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর গর্ভে তখন ছিলো পুত্র আব্দুল্লাহ ইবন আবি তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
আল্লাহু আকবার। এ সময় তিনি সাহসিকতার চরম পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন।
৩.
একদিন আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে বললেন, “আজ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্ঠস্বর একটু দুর্বল শুনতে পেলাম। মনে হলো তিনি ক্ষুধার্ত। তোমার কাছে কোনো খাবার আছে কি?”
উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কয়েক টুকরো রুটি আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) – র কাপড়ে জড়িয়ে দিয়ে তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পাঠালেন।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথের লোকজন সংগে করে আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) -র গৃহের দিকে রওনা দিলেন।
আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সকলকে দেখে স্ত্রীকে বললেন, “উম্মে সুলাইম, দেখো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজন সাথে নিয়ে এসেছেন। সবাইকে দেওয়ার মতো খাবার তো নেই।”
উম্মে সুলাইম বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কথা ভালোই জানেন।”
এরপর আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অতিথিদের বসালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে ঢুকে বললেন, “যা আছে নিয়ে এসো।”
সামান্য খাবার ছিলো তাই হাজির করা হলো। তিনি বললেন, প্রথমে দশজনকে আসতে বলো।”
দশজন ঢুকে পেট ভরে খেয়ে বের হয়ে গেল। তারপর আর দশজন। এভাবে মোট ৭০/৮০ জন পেট ভরে সেই খাবার খেয়েছিলো।”
.
সুবহানআল্লাহ। উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) -র দানশীলতা, অতিথিপরায়ণতা এবং রিজিকের ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক এর ওপর তাওয়াক্কুল ছিলো অতুলনীয়।
[** উল্লেখ্য, উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্নেহের খাদিম আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মা। তাঁর প্রথম স্বামী মালিক ইবন নাযায়ের এর ঔরসজাত পুত্র ছিলেন আনাস ইবন মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)**]
__
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটও উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন অত্যন্ত মর্যাদাশীল।
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন স্ত্রীদের ব্যতীত অন্য কোনো নারীর গৃহে ঢুকতেন না; কিন্তু উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর নিকট যেতেন। লোকেরা এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, “এর ওপর আমার বড় মায়া হয়। আমার সাথে থেকে তার ভাই নিহত (শহীদ) হয়েছে। [২]
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“I entered Paradise and heard the noise of steps. I said: Who is it? They said: She is Ghumaisa, daughter of Milhan, the mother of Anas b. Malik.” [৩]
…..
উম্মে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ। বুদ্ধিমত্তা, সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা, সাহসিকতা, অতিথিপরায়ণতা সহ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য এবং স্থাপন করেছেন অসাধারণ শিক্ষনীয় সব দৃষ্টান্ত।
___
(আল্লাহু আ’লাম)
রেফারেন্সঃ
[১] সহীহ বুখারীঃ ২/৫৮১
[২] সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং – ২৪৫৫
[৩] সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং – ২৪৫৬
• সাহাবিয়্যাত হাওলার রাসূল (মহিয়সী নারী সাহাবীদের আলোকিত জীবন – শায়খ মাহমূদ আল-মিসরী আবু আম্মার
• আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (৬)
___
লিখাটি ফেসবুক এর “Know Your Heroes – উম্মাহর নক্ষত্ররাজি” পেইজ থেকে নেয়া
Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*