উম্মুল মুমিনীন রামালাহ বিনতে আবি সুফইয়ান (উম্মে হাবীবা) রাদিয়াল্লাহু আনহা : সত্যের ওপর পর্বতসম অটল ছিলেন যে মহিয়সী রমণী
_____
তাঁর পিতা ছিলেন তৎকালীন কুরাইশ বংশের প্রভাবশালী নেতা আবু সুফইয়ান। সামাজিক মর্যাদা, বিত্ত বৈভব, প্রতিপত্তি কোনো কিছুরই কমতি ছিলো না তাঁর।
কিন্তু এসবকিছুকে পিছনে ফেলে কন্যা রামালাহ বিনতে আবি সুফইয়ান (রাদিয়াল্লাহু আনহা) আঁকড়ে ধরলেন সরল পথ। পরবর্তীতে জীবনের নানা প্রতিকূলতাও যাকে সে পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি এতটুকু।
আর মহিয়সী এ নারীকে নিয়েই আজকের আলোচনার প্রয়াস।
___
দ্বীনের প্রতি দৃঢ়তাঃ
উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ও তাঁর স্বামী উবায়দুল্লাহ ইবন জাহাশ একত্রে আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন। হিজরতের কিছুদিন পরই তাঁর স্বামী খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে মুরতাদ হয়ে গেলো।
.
এরপর সে উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কেও ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য প্রচন্ড চাপ দিতে লাগলো। কিন্তু তিনি (রাদিয়াল্লাহু আনহা) রাজি হলেন না এবং দ্বীনের হক্ব এর ওপর প্রতিষ্ঠিত রইলেন। আল্লাহু আকবার।
অতঃপর উভয়ের বিচ্ছেদ ঘটলো। [১]
.
বিচ্ছেদের পর উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর কন্যা হাবীবাকে নিয়ে একাকী আবিসিনিয়ায় বসবাস করতে লাগলেন। বিদেশ বিভূঁইয়ে নিজ পরিবার ও স্বামী ছাড়া সে সময়গুলো ছিলো অত্যন্ত দুর্দশাময়।
*উল্লেখ্য, উবায়দুল্লাহ ইবন জাহাশ পরবর্তীতে আবিসিনিয়ায় খ্রিস্টান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।*
___
উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদা লাভঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) -র দুর্দশার সংবাদ পৌঁছালো।
তিনি মদীনা থেকে আমার ইবন উমাইয়্যা দামরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মারফত আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর নিকট একটি চিঠি পাঠালেন।
.
চিঠিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জাশীকে তাঁর সাথে উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-র বিয়ে সম্পাদনের বিষয়টি নিয়ে লিখেন।
.
চিঠি পাওয়া মাত্রই নাজ্জাশী তাঁর দাসী-কে উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-র নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠালেন।
এ প্রস্তাবে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হোন এবং তাঁর মামাতো ভাই খালিদ ইবন সায়ীদ আবীল আস-কে তাঁর পক্ষের উকিল নিয়োগ করে নাজ্জাশীর নিকট পাঠান। [২]
.
নাজ্জাশী স্বয়ং বিয়ের খুতবা পাঠ করেন এবং চারশো দীনার মোহরের অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে খালিদ ইবন সায়ীদের হাতে তুলে দেন।
এভাবেই তিনি উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদায় ভূষিত হোন।
.
সুবহানআল্লাহ, আল্লাহ তা’আলা-র সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কেউ যখন কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ পাক তাঁকে এভাবেই উত্তম দ্বারা স্থলাভিষিক্ত করে দেন।
___
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধঃ
হুদাইবিয়ার সন্ধি নবায়নের লক্ষ্যে আবু সুফইয়ান মদীনায় আসলেন। মদীনায় এসে প্রথমেই তিনি মেয়ে উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-র ঘরে গেলেন।
কিন্তু পিতাকে দেখামাত্রই তিনি তাড়াতাড়ি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিছানা-টি গুটিয়ে ফেললেন।
.
এতে আবু সুফইয়ান অবাক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করলেন, – আমি এই বিছানার উপযুক্ত নই, নাকি বিছানা আমার উপযুক্ত নয়?
.
মেয়ে উত্তর দিলেন,
– এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিছানা। আর আপনি একজন মুশরিক ও অপবিত্র। তাই আমি চাইনি, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিছানায় বসুন।
.
মেয়ের কাছ থেকে এ কথা শোনার পর তিনি বললেন,
– আমাকে ছাড়ার পর তোমার মধ্যে অনেক মন্দ এসেছে। [৩]
.
বাবার প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তির চেয়েও উম্মে হাবিবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) প্রাধান্য দিয়েছিলেন আল্লাহ পাক ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসাকে, ঈমানের প্রতি দৃঢ়তাকে।
*উল্লেখ্য মক্কা বিজয়ের পর আবু সুফইয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সৈনিক হিসেবে যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন।*
….
দ্বীন এর প্রতি উম্মে হাবীবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন এমনই দৃঢ়প্রত্যয়ী একজন। স্বামীর ধর্মান্তর, উভয়ের বিচ্ছেদ, বিচ্ছেদ যন্ত্রণা, পরিবারের সকলকে রেখে আবিসিনিয়ায় একাকী পথচলা- এসবকিছু সত্ত্বেও তিনি ভেংগে পড়েন নি, দুর্বল হন নি; বরং হয়ে উঠেছিলেন আরও শক্তিশালী, সাহসী এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী। আর এ আদর্শ গ্রহণ করে আমরাও যেন হয়ে উঠতে পারি তাঁরই মতোন, আমীন।
_____
(আল্লাহু আ’লাম)
রেফারেন্সঃ
[১] আর রাহীকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা নং ৫৪০
[২] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/১৪৩ (সংক্ষেপিত)
[৩] তাবাকাতে ইবন সাআদ
• Wife of Prophet SAWS: Daughter of Abu Sufian
• Lectures
_____
লিখাটি ফেসবুক এর “Know Your Heroes – উম্মাহর নক্ষত্ররাজি” পেইজ থেকে নেয়া





